রামকৃষ্ণ পোদ্দারের কারসাজি (পর্ব-১)

টাকার গন্ধ পেলে ফাইল স্বাক্ষর হয় সাতক্ষীরা বিআরটিএতে

Passenger Voice    |    ০৫:৪২ পিএম, ২০২২-১১-২৫


টাকার গন্ধ পেলে ফাইল স্বাক্ষর হয় সাতক্ষীরা বিআরটিএতে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিসে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রত্যাশীদের ভিড় থাকে সব সময়। রয়েছে মোটর সাইকেলের রেজিষ্ট্রেশনেরও প্রচুর চাপ। অফিসের বিভিন্ন টেবিলে বসা লোকজন বিভিন্ন কাগজে সিল-ছাপ্পর মেরে কাজ সারছেন। পদবি জিজ্ঞেস করায় সাবলীল ভঙ্গিতে কেউ বললেন, ‘সিল মেকানিক’, আবার কেউবা বললেন অফিসের লোক। খোঁজ নিয়ে জানা যায় দীর্ঘ প্রায় ২ বছরের অধিক সময় ধরে বিআরটিএর এই সার্কেলের দায়িত্বে আছেন মোটরযান পরিদর্শক রামকৃষ্ণ পোদ্দার। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিআরটিএ চট্টমেট্রো সার্কেলে ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে গাড়ীর ফিটনেস সনদ প্রদানের অভিযোগ ছিল। তবে কর্তৃপক্ষ তাকে নড়াইল ও যশোর সার্কেলে বদলীর করছে সেখানেও ক্যাশিয়ার নিয়োগ দিয়ে ঘুষ বাণিজ্য চালাতো এই রামকৃষ্ণ। সেখানেও থামেনি তিনি বদলী হয়ে প্রায় ২ বছর আগে এসেছেন বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেলে। সেখানেও গড়ে তুলেন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ লেনদেনের স্বর্গরাজ্য। সিন্ডিকেট গড়েন সাতক্ষীরা সার্কেলের সদ্য বিদায়ী সহকারী পরিচালক  (ইঞ্জিঃ) ওয়াজেদ হোসেনের সাথে। পরীক্ষা নিরিক্ষা না করে দিয়েছেন ড্রাইভিং লাইসেন্স। আদায় করেছেন বিপুল অংকের ঘুষ। 

ড্রাইভিং লাইসেন্স খাতে ঘুষ বাণিজ্যঃ

প্যাসেঞ্জার ভয়েসের অনুসন্ধান বলছে, একটি পেশাদার লাইসেন্স গ্রহন করতে গ্রহককে প্রথমে অনলাইনে আবেদন করে একটি শিক্ষানবীশ ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহন করতে হয়। নির্ধারিত তারিখে দক্ষতার পরীক্ষা প্রদান করতে গেলে শুরু হয় ভোগান্তি প্রতিটি গ্রাহককে দিতে হয় পরীক্ষা পাশের জন্য মোটা অংকের টাকা। জনপ্রতি ৩০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা পর্যন্ত গ্রহন করেন বিআরটিএর এই সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক। টাকা প্রদানে অপারগ হলে গ্রাহককে হয়রানী ও ভোগান্তিতে পরতে হয়। 

সূত্র বলছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সাতক্ষীরা বিআরটিএতে ড্রাইভিং কম্পিটেন্সি টেষ্ট বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়েছে ৮ টি। ৫ সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের তালিকায় ছিল ১৯৫ জন, ১৬ জন গ্রাহক পরীক্ষায় অংশগ্রহন না করলেও বাকী গ্রাহকদের মাঝে ১৪৯ জন উর্ত্তীন হয় এবং ৩৬ জন অকৃতকার্য হয়েছে। এভাবে ৭ সেপ্টেম্বর ১৯২ জনের তালিকায় ১৭ জন অনুপস্থিত ১৪৩ জন পাস ও ৪২ জন অকৃতকার্য হয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর ১৮৬ জনের তালিকায় ২৩ জন অনুপস্থিত ১৪৭ জন পাস ও ১৬ জন অকৃতকার্য হয়েছে। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১ জনের তালিকায় ১৮ জন অনুপস্থিত ১৬৮ জন পাস ও ১৫ জন অকৃতকার্য হয়েছে। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০৭ জনের তালিকায় ২০ জন অনুপস্থিত ১৭০ জন পাস ও ১৭ জন অকৃতকার্য হয়েছে। ২১ সেপ্টেম্বর ২০৮ জনের তালিকায় ১৯ জন অনুপস্থিত ১৫৭ জন পাস ও ৩২ জন অকৃতকার্য হয়েছে। ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯ জনের তালিকায় ১৩ জন অনুপস্থিত ১৬১ জন পাস ও ২৫ জন অকৃতকার্য হয়েছে। ২৮ সেপ্টেম্বর ২১৪ জনের তালিকায় ২৪ জন অনুপস্থিত ১৬৩ জন পাস ও ২৭ জন অকৃতকার্য হয়েছে। 

অক্টোবর মাসে সাতক্ষীরা বিআরটিএতে ড্রাইভিং কম্পিটেন্সি টেষ্ট বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়েছে ৮ টি। ১১ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের তালিকায় ছিল ২০৯ জন, ৪০ জন গ্রাহক পরীক্ষায় অংশগ্রহন না করলেও বাকী গ্রাহকদের মাঝে ১৬৫ জন উর্ত্তীন হয় এবং ৪ জন অকৃতকার্য হয়েছে। এভাবে ১৭ অক্টোবর ১৯৮ জনের তালিকায় ৪৫ জন অনুপস্থিত ১৪৭ জন পাস ও ০৬ জন অকৃতকার্য হয়েছে। ১৮ অক্টোবর ২০৪ জনের তালিকায় ৫১ জন অনুপস্থিত ১৪৯ জন পাস ও ৪ জন অকৃতকার্য হয়েছে। ১৯ অক্টোবর ২০৭ জনের তালিকায় ৪১ জন অনুপস্থিত ১৬১ জন পাস ও ০৫ জন অকৃতকার্য হয়েছে। ২০ অক্টোবর ২০৭ জনের তালিকায় ৪৬ জন অনুপস্থিত ১৫১ জন পাস ও ১০ জন অকৃতকার্য হয়েছে। ২৪ অক্টোবর ২৪৯ জনের তালিকায় ৭৬ জন অনুপস্থিত ১৭০ জন পাস ও ০৩ জন অকৃতকার্য হয়েছে। ২৬ অক্টোবর ২০৮ জনের তালিকায় ৫০ জন অনুপস্থিত ১৫৫ জন পাস ও ০৩ জন অকৃতকার্য হয়েছে। ৩১ অক্টোবর ২০৩ জনের তালিকায় ৪৪ জন অনুপস্থিত ১৫৪ জন পাস ও ০৫ জন অকৃতকার্য হয়েছে। সর্বমোট দুই মাসে ২৫১০ জন ব্যক্তি পরীক্ষায় পাস করেন সাতক্ষীরা বিআরটিএতে। এইসব ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রত্যাশী গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩৫০০ টাকা করে সর্বমোট ৮৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ঘুষ লেনদেন হয়েছে । এই টাকা সিংহ ভাগ পেয়েছেন মোটরযান পরিদর্শক রামকৃষ্ণ পোদ্দার।

মোটর সাইকেল রেজিষ্ট্রেশনে ঘুষ লেনদেন রাম কৃষ্ণ পোদ্দারের ঃ

মোটর সাইকেলের রেজিষ্ট্রেশনের চাহিদা খুলনা বিভাগে সব জেলা থেকে সাতক্ষীরা জেলায় সবচেয়ে বেশি। প্রতিটি মোটরসাইকেল নিবন্ধনে বিভিন্ন মোটর সাইকেলের বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানকে দিতে হয় রেজিষ্ট্রেশন ফি এর অতিরিক্ত ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। এই টাকার প্রতি ফাইল বাবদ মোটরযান পরিদর্শক রামকৃষ্ণ পোদ্দারকে দিতে হয় ১ হাজার টাকা। 

আমাদের তথ্য বলছে চলতি বছরের আগষ্ট মাসে এই সার্কেলে মোটর সাইকেল নিবন্ধন হয়েছে ১২৪১ টি । ১ হাজার টাকা করে প্রতি ফাইল হিসেবে ১২ লাখ ৪১ হাজার টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে নিবন্ধন হয়েছে ৯৪৬ টি ঘুষ লেনদেন হয়েছে ৯ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। অক্টোবর মাসে ৮২৮ টি মোটরসাইকেল নিবন্ধনে ৮ লাখ ২৮ হাজার টাকা ঘুষ লেনদেন হয়। নভেম্বর মাসে ৯৬৮ টি মোটরসাইকেল নিবন্ধনে ৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকা ঘুষ লেনদেন হয় বিআরটিএর সাতক্ষীরা সার্কেলে। 

এই বিষয়ে জানতে সাতক্ষীরা বিআরটিএর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) মাহবুব কবির প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন,  আমি এই সার্কেলে বদলী হয়েছি ২-৩ মাস হয়েছে। আমি এই বিষয় গুলো অবগত নহে। এখন যেহেতু বিষয়টি অবগত হয়েছি সেহেতু আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করিব।